ঢাকা,বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

রমজানে বেসামাল নিত্যপণ্যের বাজার

# দূর্বল মনিটরিং ব্যবস্থার সুযোগ নিচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা #

নিজস্ব প্রতিবেদক ::

পবিত্র রমজানকে কেন্দ্র করে নিত্য প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম বেড়ে স্থিতিশীল হয়েছে। পণ্যের লাগামহীন দাম বাড়ায় চরম সংকটে পড়েছে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার।

ভোক্তাদের অভিযোগ, সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা দুর্বলতার কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছেন। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকট ও এলসি করতে না পারায় পণ্যের দাম বেড়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) শহরের বড় বাজার, বাহারছড়া বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন তথ্য।

বাজারে রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্য ছোলা, খেসারির ডাল, মশুর ডাল, অ্যাংকর, বেসন, ডাবলি, সয়াবিন তেল, পাম ওয়েল, চিনিসহ সব পণ্যই দাম বেড়েছে। বাজারে মাংসের দামও অপরিবর্তিত রয়েছে।

দাম বাড়ার বিষয়টি স্বীকার করে বিক্রেতারা বলছেন, মানভেদে এখন ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা, অ্যাংকর ডাল কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা, বেসনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা, খেসারির ডাল ৯০ থেকে ১০০ টাকা, সয়াবিন কেজি ১৯০ টাকা, পাম ওয়েল ১৫০ টাকা এবং চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি দরে। আর পাউডার দুধ বিক্রি হচ্ছে ২০০ গ্রামের প্যাকেট ২৩৫ টাকা, যা কেজিতে হাজার ছুঁই ছুঁই। ডিম ডজন প্রতি ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। রসুন ১৬০ টাকা, পেয়াজ ৪০ টাকা। এছাড়া রমজানে রোজাদারদের চাহিদার পাঁকা কলার দামও বেড়েছে বহুগুণ।

অন্যদিকে বয়লার মুরগী বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ২৬০ টাকা, দেশি মুরগী বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা, সোনালী মুরগী ৩২০ টাকা, গরুর মাংস (হাড় ছাড়া) ৮০০ টাকা, হাড়সহ ৭০০ টাকা, খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
বড় বাজারের ব্যবসায়ী মনির সওদাগর বলেন, রমজানের পণ্যগুলো গত দুই সপ্তাহ আগে থেকেই দাম বেড়েছে। আমরা বাড়তি দামে পণ্য কিনেছি তাই বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।

বড় বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী কাসেম স্টোরের মিজানুর রহমান জানান, সব জিনিসের দাম ঠিক আছে। কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। রমজান উপলক্ষে প্রতিবার দাম বাড়ে।
রমজানকে সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাতেও বাজারে কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছেনা।

সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, সামনে রমজান মাস আসছে। ধর্ম বলেছে সংযমী হতে, নিজেকে কন্ট্রোল করতে। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে একটাই কথা সেটি আবারও বলতে চাই, অন্তত এই মাসটাতে একটুখানি সংযমী হওয়া দরকার। আপনারা দয়া করে যেটি ন্যায্য হওয়া উচিত সেটাই করবেন। শাক-সবজির বাজারেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বেগুন, শীম, আলু, তিথ করলা, পটল, চিচিঙ্গা, লাউ, মিষ্টি কুমড়াসহ সবকিছুতেই কেজিতে ৫- ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কাঁচা মরিচ ১০০- ১২০ টাকা। শুধু কম দামে পাওয়া যাচ্ছে টমেটো। কেজিতে ১০- ২০ টাকা। ভোক্তারা মনে করছেন, কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে নিত্যপণ্যের দাম ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা। যাতে করে রমজানে দু’বেলা একটু ভালো খেয়ে গরিব মানুষ সংযম সাধনা করতে পারে।

শামসুল ইসলাম নামে এক ক্রেতা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম বাড়েনি। সংসার চালানো খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ছে। আমরা যারা সাধারণ মানুষ তারা হিমশিম খাচ্ছি। সবকিছুর দাম এভাবে বাড়তে থাকলে চলার উপায় থাকবে না।
বাহারছড়া বাজারে বাজার করতে আসা নুরুল ইসলাম বলেন, স্বল্প আয়ের মানুষের হাসি-কান্না অনেকটাই নির্ভর করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ওপর। মাসের শুরুর দিকে হাতে টাকা থাকলেও শেষের দিকে ধার করে চলতে হয়। যে হারে পণ্যের দাম বাড়ছে, তাতে পরিবার নিয়ে চলা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

জেলা কৃষি বিপনন কর্মকর্তা শাহজাহান আলী বলেন, আমাদের বাজার মনিটরিং প্রতিনিয়ত চলমান আছে।
অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো: আবু সুফিয়ান দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, গত এক সপ্তাহ থেকে উপজেলা পর্যায়ে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। শুক্রবার রমজানের প্রথম দিন জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে শহরের বিভিন্ন এলাকার মুদির দোকান থেকে শুরু করে কাঁচা বাজারে দাম যাচাই-বাছাই করা হবে। কেউ অতিরিক্ত দাম নেওয়ার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, কোথাও কোনো জায়গায় নিত্যপণ্যের দাম বেশি নিচ্ছে এমন অভিযোগ থাকলে সরাসরি তাঁকে জানানোর কথা বলেন।

পাঠকের মতামত: